খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  বাংলাদেশে শান্তি অত্যন্ত জরুরি, এটা যেন মনে রাখি: প্রধান উপদেষ্টা
  নরসিংদীতে ঈদের দিন ৪ জনকে কুপিয়ে জখম, একজনকে জবাই করার চেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর : ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী বেইজিং

গেজেট ডেস্ক

ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনে রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে বেইজিংয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে পরের ধাপে নিতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল বেইজিংয়ে দুই শীর্ষ নেতার আলোচনা প্রসঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিও তাঁর এক্সে এমন মন্তব্য করেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দুই নেতার মধ্যে ঘণ্টাখানেক দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের জোরালো ভূমিকা কামনা করেছেন। অন্যদিকে সি চিন পিং বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এবং চীনের উৎপাদন প্রতিষ্ঠান স্থানান্তরে সে দেশের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

দুই শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সহযোগিতার নানা বিষয়ে একটি চুক্তি ও আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাঁচটি ঘোষণা এসেছে।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, চীন থেকে ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বাসসকে জানিয়েছেন, চীনের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ করতে বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানানোর পর এ অঙ্গীকার এসেছে।

চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের ঋণ, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণসহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।

তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে চীন স্বাগত জানিয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে সরকারের গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে। উভয় পক্ষ সমগ্র কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব আরও সুসংহত ও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ ও চীন জলবিদ্যুৎ, পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানিসম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বিনিময়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বেইজিংয়ের আলোচনায় দুই পক্ষ ইয়ারলুং জাংবো-যমুনা নদীর জলবিদ্যুৎ তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষরকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছে।

বাংলাদেশ ও চীনের পক্ষ থেকে যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনঃসংস্কার প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সমুদ্রসংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য বিনিময় জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে সামুদ্রিক সহযোগিতা–সংক্রান্ত নতুন সংলাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা

বাংলাদেশ এক চীন নীতির প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বৈধ সরকার এবং তাইওয়ান চীনের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চীনের মূল স্বার্থ এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের প্রচেষ্টা–সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ চীনকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা করে।

যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উভয় পক্ষ পরস্পরের প্রধানতম স্বার্থ ও উদ্বেগের বিষয়ে পারস্পরিক সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সমর্থন প্রদান করে।

চীন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনভাবে নির্ধারিত উন্নয়ন পথকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন পথ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে বলে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চীন সব সময়ই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সুপ্রতিবেশীসুলভ নীতির অনুসারী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর শাসন পরিচালনা, জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়ে আসছে।

উভয় পক্ষ জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং বাস্তবিক বহুপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে।

উভয় দেশ সমতার ভিত্তিতে শৃঙ্খলাপূর্ণ বহুপক্ষীয় বিশ্ব ও সর্বজনীনভাবে উপকারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

রোহিঙ্গা সংকটে পাশে থাকবে চীন

মিয়ানমার সংকট ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের গঠনমূলক ভূমিকা এবং রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের সমস্যা সমাধানে চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে চীন রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে চীন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় চীন সর্বোচ্চ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।

‘শান্তি ও স্থিতিশীলতায় চীনের জোরালো ভূমিকা চাই’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন। অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

বাংলাদেশে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অভ্যুত্থান ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথ সুগম করেছে। চীনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসা প্রচলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে চীনের শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!